25Jul
আমাদের রক্তে সাম্প্রদায়িকতার বীজবুনলো কারা এইটা নিয়ে লিখবো বলে ভাবছি কদিন হল। এই মাসে লকডাউন তার কারনে বুর্জোয়াগিরিতে মন্দাভাব তাছাড়া রমজানে কাজ কম করলেও কম বেশী পড়াশুনা করা হয়েছে। ‘ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতা, সাহিিত্য ও রাজনীতি’ নিয়ে একটা ইংরেজী প্রবন্ধ লিখছি তার কিয়দংশ তুলে ধরা হলঃ-
শব্দ সাম্প্রাদায়িকতা , সাহিত্য সাম্প্রাদায়িকতা, শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা , সমাজে সাম্প্রদায়িকতা এবং রাষ্ট্রে সাম্প্রাদায়িকতা এইসবের ভিত্তিপ্রস্তর করেছে কারা এবং কেন করেছে সেইটা অনেকটা ভাবার বিষয়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ,দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ডঃ ইকবাল (আল্লামা ইকবাল),মির্জা গালিব , ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, কবি নজরুল ইসলামের ভারতবর্ষের জাতীয়তাবাদের আন্দোলনে এদের প্রভাব ছিল প্রণিধানযোগ্য।কলকাতা তথা পোর্ট ওইলিয়াম বেইজড সভ্যতার রেশ থাকায় বাংলা সাহিত্যের সুমহান প্রভাব আছে ভারতবর্ষের রাষ্ট্র কাঠামোতে।
আজকের ভারতে জাতীয় গান ‘বন্দে মাতরম্’ বঙ্কিমের‘ ১৮৮২ সালে রচিত আনন্দমঠ উপন্যাসের অন্তর্ভুক্ত একটি গান। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই গানটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। ১৮৯৬ সালে বিডন স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে গানটি পরিবেশন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯০৫ সালে হীরালাল সেন ভারতের প্রথম রাজনৈতিক চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন; এই চলচ্চিত্রের সমাপ্তি হয়েছিল গানটির মাধ্যমে। ব্রিটিশ পুলিশের হাতে নিহত হওয়ার আগে মাতঙ্গিনী হাজরার শেষ উচ্চারিত শব্দ ছিল “বন্দেমাতরম”।১৯০৭ সালে ভিখাজি কামা ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকার যে রূপদান করেছিলেন, তার মাঝের ব্যান্ডে দেবনাগরী হরফে “বন্দে মাতরম্ ” ধ্বনিটি খোদিত ছিল। যদিও ভারতের কিছু মুসলিম রাজনৈতিক দল এইখানে দেবদেবীর বন্দনাগীতি খুজে বার করার পরে দেওবন্দ মাদ্রসা এইখানে ফতোয়া জারি করেন। তেলেঙ্গানার আসাদ উদ্দিন অয়াইসিরা এইটা নিয়ে বেশ রাজনীতি করে একটু পরিবর্তন করে গাওয়ার বৈধতা বিশ্লেষণ করেছে।
আজকের ভারতের অন্যতম জাতীয় গান ‘সারে জাহান সে আচ্ছা, হিন্দুস্তান হামারা’ আল্লামা ইকবাল লিখেন ১৯০৪ সালে। ভারতবর্ষের মুসলিম ও হিন্দু মধ্যভিত্তের রাজনীতিতে উতাল মাতাল অবস্থা বিরাজ করে বঙ্গবঙ্গের প্রস্ততি চলছিল তখন আল্লামা ইকবাল অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন বুনে ১৬ আগস্ট প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইত্তেহাদ পত্রিকায় কবিতাটা লিখেন। আজকের ১৫০ কোটি ভারতীয়রা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে গানটি গেয়ে বেড়ান। যদিও আরএসএস এইটা নিয়ে রাজনীতি করতে চেয়েছিল ভারতীয়দের পালস বুঝে ক্ষমা চেয়ে ফেরত এসেছে। ১৯৩০ সালে মহত্মা গান্ধী জেলে থাকাকালীন এই গান শতভাগ ভারতীয় হয়েছিল। কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বঙ্গবঙ্গের বিরোধিতা করে “ধনধান্যে পুষ্পে ভরা” গানটি রচনা করেন। উর্দু কবি ফায়েজ আহমেদ ফয়েজ ১৯৪৭ এর ভারত পাকিস্তান স্বাধীন হবার পরের দিন কবিতা লিখেন সুবে আজাদি তথা সকালের স্বাধীনতা। তার কবিতায় তিনি এই রক্তস্নাত স্বাধীনতা ব্রিটিশরা আমাদেরকে দিয়ে আরও রক্তের হলিখেলার সূচনা করেছে না তো। কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ্রা অখণ্ড ভারতবর্ষ, অয়াম্প্রাদায়িক ভারতবর্ষ চেয়েছিলেন।
আজকের ভারত এবং বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি। ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ ভারতের জাতীয় সঙ্গীত। এই গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক তৎসম বাংলা ভাষায় রচিত।১৯১১ সালে জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে কবিতাটি জাতীয় কংগ্রেসের একটি সভায় এটি প্রথম গীত হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীন ভারতের জাতীয় সঙ্গীত স্বীকৃতি লাভ করে এর প্রথম স্তবকটি। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে ভারতে কোন সাম্প্রাদায়িকতা না থাকলে বাংলাদেশে উগ্রমৌলবাদ গুষ্ঠি এবং পাকিস্তান আদর্শিক জামাতে ইসলাম এ অনীহা প্রবল। বাংলাদেশের আজকের জাতীয় সঙ্গীত কবিগুরু ১৯০৫ সালে আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গানটি রচনা করেন। পরবর্তীতে ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ এই গান কে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কউমী মাদারসায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হলেও আমার মনে হয়েছে তারা হৃদ্যতার সাথে গাচ্ছে না।এইটা নিয়ে রাষ্ট্রের চেয়ে পরিবার ও সমাজের কার করতে হবে বেশী। পাকিস্তান রবীন্দ্রনাথের প্রতি অনীহা প্রকাশ করে রবীন্দ্রনাথের সব বই অবৈধ ঘোষণা করেছিল। শুধু টা নয় আইয়ুব খান প্রজ্ঞাপন জারি করে নোট দিয়ে বলেছিল রবীন্দ্রনাথ পড়লে ইসলাম ধর্ম বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
Leave a Reply