ল্যাঙ্গুয়েজটিক কলোনিয়ালিজম

ল্যাঙ্গুয়েজটিক কলোনিয়ালিজম

ল্যাঙ্গুয়েজটিক কলোনিয়ালিজম এবং লিটারেরি কলোনিয়ালিজম সব কলোনিতে হয়েছে। ওলন্দাজ, ফ্রেঞ্চ এবং ব্রিটিশরা ল্যাঙ্গুয়েজটিক ও লিটারেরি ইফেক্ট দিতে পারলে ও জাপানিজরা পারেনাই।সবাই ল্যাংগুয়েজ দিয়ে প্রবেশ করে লিটারেচার দিয়ে সম্প্রসারিত করেছে।পোস্ট কলোনিয়ালিজমে এই দুইটি উপাদান ক্ষমতাতত্তে এর স্বরূপ ধরে রেখেছে। কলোনি শেষ হয়ে গেলেও রাষ্ট্রের প্রশাসনযন্ত্রে কলোনি শেষ হয়নি। সত্য ও ক্ষমতা দান্দিক অবস্থান বিরাজ করে শ্রমিক শ্রেণির ক্ষেত্রে আবার বুরজুয়াদের ক্ষেত্রে ক্ষমতা থাকে বলে মিথ্যা ও সত্যে পরিনত হয়- যেইটা কলোনি থাকাকালীন ও ছিল।
সত্য ও ক্ষমতার প্রশ্নে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ফরাসি দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী মিশেল ফুকো’র নাম প্রথমেই সামনে চলে আসে। তিনি তার লেখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে সত্য ও ক্ষমতার মধ্যের সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করেছেন। সেইসঙ্গে সমাজে স্বতন্ত্রদের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের সত্য উৎপাদন সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
১৯৭০ সালের এক সাক্ষাৎকারে মিশেল ফুকো সত্য ও ক্ষমতার সম্পর্ক বিষয়ে তার ধারণার সংক্ষিপ্ত একটা সারমর্ম টানেন। তা হচ্ছে, সত্য ক্ষমতার বাইরের কিছু নয়, কিংবা ক্ষমতা অনুপস্থিতিও নয়। বর্তমান বিশ্বে সত্য হচ্ছে এমন একটা কিছু, যা শুধু দ্বন্দ্বের বহুমুখি ধরনের মাধ্যমে তৈরি হয় এবং এটা ক্ষমতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত সম্পর্কিত। প্রতিটি সমাজেই সত্যের একটা অবস্থা আছে। ফুকো তার ধারণায় উল্লেখ করেন, প্রতিটি সমাজই তার নিজস্ব সত্যের শাসন থাকে এবং অবশ্যই, তার পর্যবেক্ষণের নির্ভুলতা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। সর্বোপরি, অন্যান্য কারণ সত্যেও আফগানিস্তানের মুসলিমের জন্য সবচেয়ে মৌলিক ও অনস্বীকার্য সত্য যে, সেখানে একজন মাত্র ঈশ্বর আছেন। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে সৃষ্ট সীমান্তের ওপারে ভারতের লক্ষ-কোটি মানুষের দ্বারা তা উপহাসের স্বীকার হবে। খুব স্বাভাবিকভাবে সব সমাজ তার সত্যের আলাদা-আলাদা রূপ সম্প্রসারণের মাধ্যমে উপকৃত হয়। তবে প্রতিটি সমাজ অন্য সমাজে তার সত্যের গ্রহণযোগ্যতা আদায়ে চেষ্টার মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী জ্ঞানতত্ত্বের যুদ্ধ অবসম্ভাবী করে তুলেছে। ঠিক এই কারণেই, সব তত্ত্বীয় মূলনীতি নিজের বাস্তব সত্য বিশ্বে তুলে ধরার জন্য পূর্বের অবদমিত জনগোষ্ঠীকে অতীত লিখনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
ফুকো দেখিয়েছেন যে, জ্ঞান সংগ্রহ ও দ্রুত বংশবিস্তার সত্য নির্মাণকে এগিয়ে নেয় এবং তা ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণকে নির্ধারণ করে। কিংবা জ্ঞান অবস্থার বাস্তবতার সঙ্গে সব যোগাযোগ বজায় রাখায় খুব কম গুরুত্বই বহন করেছে, সত্য সর্বদাই তৈরি হয়েছে এবং ক্ষমতাশীন প্রভুর হাতেই তা থেকে গেছে।
বিষয়টা জ্ঞানতাত্ত্বিক এডওয়ার্ড ডব্লিউ. সাঈদ আরো ভালোভাবে দেখিয়েছেন। তিনি তার ‘ওরিয়েন্টালিজমতত্ত্বে বিশ্লেষণের মাধ্যমে পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্যকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। আফ্রিকাকে নিয়ে লেখা পশ্চিমা লেখকদের সাহিত্যের দিকে চোখ বুলালেই তার অজস্র উদাহরণ পাওয়া যাবে।
আফ্রিকা, আফ্রিকার সাহিত্য কিংবা এখানে আলোচ্য চিনুয়া আচেবে নিয়ে কথা বলতে গেলে, অবশ্যসম্ভাবীভাবে আমাদের সত্যের রাজনীতি ও জ্ঞানতত্ত্ব সম্পর্কে এইটুকু জ্ঞান রাখতেই হয়। কারণ, চিনুয়া আচেবে একজন আফ্রিকান লেখক এবং যিনি মনে করেন, আফ্রিকার ঔপনিবেশিক শক্তিরা আফ্রিকা সম্পর্কে সারা বিশ্বে ক্রমাগত ভুল তথ্য দিয়ে গেছে। ফলে বিশ্বে আফ্রিকা সম্পর্কে মিথ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে। আচেবে উল্লেখ করেন, গত পাঁচশ বছর ধরে ইউরোপের সঙ্গে আফ্রিকার সম্পর্ক সাহিত্যের এমন শরীর তৈরি করেছে, যা আফ্রিকাকে খুব বাজে এবং অমানুষিকভাবে উপস্থাপন করেছে।
নিঃসন্দেহে এখন আর সশস্ত্র উপায়ে, সশরীরে কোথাও উপনিবেশ হবে না। কিন্তু স্বাধীন দেশে কিংবা উপনিবেশ-উত্তর দেশে উপনিবেশ স্থাপনের জন্য ওই দেশগুলোর অস্থিরতা সৃষ্টি, সামরিক ক্যু’র মধ্য দিয়ে স্বাধীন সরকার উৎখাত করা হবে। তারপর সেখানে একটা তাঁবেদারি শাসক বসিয়ে দেয়া হবে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকালেই তা দেখতে পাই। ব্যাপারটা আচেবের সময়ও ছিল। মানচিত্রে বায়াফ্রা নামক দেশের জন্ম ও মিলিয়ে যাওয়া নিয়ে আচেবে লেখন ‘দেয়ার ওয়াজ এক কান্ট্রি’।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *